শান্তির দূত নেলসন ম্যান্ডেলা

নেলসন রোলিহালালা ম্যান্ডেলা ১৯১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রান্সকিতে জন্মগ্রহণ করেন।তার বাবা হেনরি মেন্ডেলা টেম্বু উপজাতির প্রধান ছিলেন।মেন্ডেলা প্রথমে ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও পরে উইট ওয়াটারসরেন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন।১৯৪২ সালে তিনি আইন
বিষয়ে ডিগ্রি নেন।১৯৪৪ সাল পর্যন্ত তিনি ন্যাশনাল পার্টির দমন-পীড়ন নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন এবং ১৯৫৬-৬১ সাল পর্যন্ত কারাবরণ করেন।পারিবারিকভাবে আয়োজিত বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে তিনি জোহানেসবার্গে একটি আইন প্রতিষ্ঠাআনে শিক্ষানবিশ হিসাবে যোগ দেন।ঐ বছরগুলোতে বর্ণ-বৈষম্যের তিক্ত ছবিগুলো তার মনে গভীর রেখাপাত করে।তিনি অনুভব করেন ঔপনিবেশিক প্রক্রিয়ায় কীভাবে কালো মানুষগুলোকে কী করে না মানুষের পর্যায়ে নামিয়া আনা হয়েছে।এরকম অবস্থায় তিনি বিদ্যমান আইন-কানুনের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলন শুরু করেন।যোগদেন এ এন সি তে।১৯৬০ সালে সার্পভিলে কালোদের অধিকার খর্ব করে এমন একটি আইনের প্রতিবাদ করার সময় নারী ও পুরুষের উপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়।এতে মারা যায় ৬৯ জন,এসময় এ এন সি কে নিষিদ্ধ করা হয়।

নেলসন গুপ্ত সামরিক শাখা গঠন করলে তাকে গ্রেফটার করে জোহানেসবার্গের কারাগারে রাখা হয়।১৯৬৪সালে তাকে রোবেন দ্বীপে পাঠানো হয়।২৭ বছরের কারাজীবনে ১৮ জীবনেই তিনি এখানে ছিলেন।রোবেন দ্বীপের এ কারাগারকে তিনি আখ্যা দিয়েছিলেন রোবেন ইউনিভার্সিটি।জেলে থাকার সময়ে বিশ্বজুড়ে তাঁর খ্যাতি বাড়তে থাকে।
http://www.un.org/News/dh/photos/large/2012/July/07-18-2012nelsonmandela.jpg
 তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৃষ্ণাঙ্গ নেতা হিসাবে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেন। সশ্রম কারাদণ্ডের অংশ হিসাবে রবেন দ্বীপের কারাগারে ম্যান্ডেলা ও তাঁর সহবন্দীরা একটি চুনাপাথরের খনিতে শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে বাধ্য হন।কারাগারের অবস্থা ছিলো বেশ শোচনীয়। কারাগারেও বর্ণভেদ প্রথা চালু ছিলো। কৃষ্ণাঙ্গ বন্দীদের সবচেয়ে কম খাবার দেয়া হতো। সাধারণ অপরাধীদের থেকে রাজনৈতিক বন্দীদের আলাদা রাখা হতো। রাজনৈতিক বন্দীরা সাধারণ অপরাধীদের চাইতেও কম সুযোগ সুবিধা পেতো। ম্যান্ডেলা তাঁর জীবনীতে লিখেছেন, তাঁকে ডি-গ্রুপের বন্দী হিসাবে গণ্য করা হতো, অর্থাৎ সবচেয়ে কম সুবিধাপ্রাপ্ত বন্দীদের তালিকায় তাঁকে রাখা হয়েছিলো। তাঁকে প্রতি ৬ মাসে একটিমাত্র চিঠি দেয়া হতো এবং একজনমাত্র দর্শনার্থীর সাথে দেখা করার অনুমতি দেয়া হতো। ম্যান্ডেলাকে লেখা চিঠি কারাগারের সেন্সরকর্মীরা অনেকদিন ধরে আটকে রাখতো। চিঠি ম্যান্ডেলার হাতে দেয়ার আগে তার অনেক জায়গাই কালি দিয়ে অপাঠযোগ্য করে দেয়া হতো।
কারাগারে থাকার সময়ে ম্যান্ডেলা লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষণ কর্মসূচীর আওতায় পড়াশোনা শুরু করেন এবং আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীকালে ১৯৮১ সালে তাঁকে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দেয়া হয়। কিন্তু তিনি প্রিন্সেস অ্যানের কাছে সেই নির্বাচনে হেরে যান।
http://i2.mirror.co.uk/incoming/article1772329.ece/ALTERNATES/s2197/Nelson%20Mandela-1772329.jpg
দক্ষিণ আফ্রিকার গোয়েন্দা বিভাগের গুপ্তচর গর্ডন উইন্টার ১৯৮১ সালে আত্মজীবনী লিখেন, যার শিরোনাম ছিলো Inside BOSS[৫০]। এই আত্মজীবনীতে উইন্টার দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের একটি গোপন ষড়যন্ত্রের কথা ফাঁস করে দেন। এই ষড়যন্ত্র অনুসারে ১৯৬৯ সালে ম্যান্ডেলাকে কারাগার থেকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে কারাগারে হামলা চালাবার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। উইন্টারের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার গুপ্তচরেরা এই ষড়যন্ত্রে অংশ নেয় ও মদদ দেয়। উদ্দেশ্য ছিলো, কারাগার থেকে ম্যান্ডেলাকে পালাতে দেয়া, যাতে তাঁকে ধাওয়া করে পুনরায় গ্রেপ্তারের নামে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলা যায়। এই ষড়যন্ত্রের খবর ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা জেনে ফেলায় তা নস্যাত হয়ে যায়।
http://www.nelsonmandela.org/images/uploads/MandelaThembi.jpg
১৯৮২ সালের মার্চ মাসে ম্যান্ডেলাকে রবেন দ্বীপের কারাগার থেকে পোলস্‌মুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এসময় ম্যান্ডেলার সাথে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের উচ্চপদস্থ নেতা ওয়াল্টার সিসুলু, অ্যান্ড্রু ম্লাগেনি, আহমেদ কাথরাদা এবং রেমন্ড ম্‌লাবাকেও সেখানে নেয়া হয়। ধারণা করা হয়, রবেন দ্বীপে কারারুদ্ধ নতুন প্রজন্মের কৃষ্ণাঙ্গ রাজনৈতিক বন্দীদের উপর ম্যান্ডেলা ও অন্যান্য নেতার প্রভাব কমানোর জন্যই এটা করা হয়। তরুণ কর্মীদের উপরে ম্যান্ডেলা ও তাঁর সহযোদ্ধাদের এই প্রভাবকে ব্যঙ্গ করে "ম্যান্ডেলা বিশ্ববিদ্যালয়" বলা হতো। তবে ন্যাশনাল পার্টির তদানিন্তন মন্ত্রী কোবি কোয়েটসির মতে ম্যান্ডেলাকে স্থানান্তর করার মূল লক্ষ্য ছিলো ম্যান্ডেলার সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের গোপন বৈঠক ও আলোচনার ব্যবস্থা করা।

১৯৮৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার তদানিন্তন রাষ্ট্রপতি পি ডব্লিউ বোথা ম্যান্ডেলাকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়ার প্রস্তাব দেন। শর্তটি ছিলো, ম্যান্ডেলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করতে হবে।] কোয়েটসি সহ অন্যান্য মন্ত্রীরা অবশ্য বোথার এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। তারা মত প্রকাশ করেন যে, ম্যান্ডেলা ব্যক্তিগত কারামুক্তির লোভে পড়ে কখনোই নিজের সংগঠনকে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ থেকে সরিয়ে আনবেন না। ম্যান্ডেলা আসলেই এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। তিনি তাঁর মেয়ে জিন্দজির মাধ্যমে একটি বিবৃতি দেন, যাতে তিনি বলেন,
"What freedom am I being offered while the organisation of the people remains banned? Only free men can negotiate. A prisoner cannot enter into contracts." (আমাকে মুক্ত করার জন্য দেয়া এ কেমনতরো প্রস্তাব, যেখানে জনগণের সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করে রাখা হচ্ছে? কেবল মুক্ত মানুষই আলোচনায় বসতে পারে। বন্দীরা কখনো চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারে না।)
ম্যান্ডেলা ও ন্যাশনাল পার্টি সরকারের মধ্যকার প্রথম আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বর মাসে। কোবি কোয়েটসি ম্যান্ডেলার সাথে কেপ টাউনের ভোক্স হাসপাতালে দেখা করেন। ম্যান্ডেলা তখন প্রস্টেট গ্রন্থির শল্য চিকিৎসা শেষে আরোগ্য লাভ করছিলেন।পরের চার বছর ধরে ম্যান্ডেলার সাথে সরকার একাধিকবার আলোচনায় বসে। কিন্তু এসব আলোচনায় বিশেষ কিছু অগ্রগতি হয়নি।
http://ivn.us/pangea/files/2012/07/Nelson-Mandela-02.jpg
১৯৮৮ সালে ম্যান্ডেলাকে ভিক্টর ভার্সটার কারাগারে সরিয়ে নেয়া হয়। মুক্তির আগ পর্যন্ত ম্যান্ডেলা এখানেই বন্দী ছিলেন। আস্তে আস্তে তাঁর উপরে কড়াকড়ি কমানো হয় এবং দর্শনার্থীদের সাথে দেখা করার অনুমতি দেয়া হয়। ম্যান্ডেলার ছাত্রজীবনের বন্ধু হ্যারি শোয়ার্জ এসময় তাঁর সাথে দেখা করেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা অনেক দেশের সরকারের কাছেই একসময় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বিশেষ করে শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী সরকারের পশ্চিমা মিত্রদের কাছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক থাকা যুক্তরাজ্যের প্রয়াত ‘লৌহমানবী’ মার্গারেট থ্যাচার ম্যান্ডেলার দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসকে (এএনসি) ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে বর্ণনা করেছেন। তবে ২৫ বছর আগে এক জুন মাসে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত একটি কনসার্ট ম্যান্ডেলার ভাবমূর্তি অনেকটাই পাল্টে দেয়।
অসুস্থ ম্যান্ডেলা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে সম্প্রতি ১৯৮৮ সালের ১১ জুনের সেই কনসার্টের স্মৃতিচারণা করেছেন আয়োজকদের একজন টনি হলিংসওয়ার্থ (৫৫)। জোহানেসবার্গ সফরকালে হলিংসওয়ার্থ বলেন, তিনি ম্যান্ডেলার একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সংগীতকে কৌশল হিসেবে ব্যবহারের পরামর্শ দেন ব্রিটিশ বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রেসিডেন্ট আর্চবিশপ ট্রেভর হাডলস্টোনকে।
আর্চবিশপ ট্রেভর হাডলস্টোন তখন লন্ডন আন্দোলনের প্রধান শিল্পী মাইক টেরি, এএনসিসহ অন্যদের সঙ্গে কনসার্টের ব্যাপারে কথা বলেন।
হলিংসওয়ার্থ বলেন, ‘প্রায় ৭০টি দেশে সম্প্রচারিত কনসার্টটি ম্যান্ডেলাকে সন্ত্রাসী থেকে কৃষ্ণাঙ্গদের নেতায় পরিণত করে।’
কনসার্টে মার্কিন গায়ক হ্যারি বেলাফন্টে বলেন, ‘আমরা আজ এখানে এক মহান নেতাকে সম্মান জানাতে সমবেত হয়েছি। তিনি হলেন নেলসন ম্যান্ডেলা।

Free Nelson Mandela
Free free
Free free free Nelson Mandela

Free Nelson Mandela

21 years in captivity
Shoes too small to fit his feet
His body abused, but his mind is still free
You're so blind that you cannot see

Free Nelson Mandela

Visited the causes at the AMC
Only one man in a large army
You're so blind that you cannot see
You're so deaf that you cannot hear him

Free Nelson Mandela

21 tears in captivity
You're so blind that you cannot see
You're so deaf that you cannot hear him
You're so dumb that you cannot speak

Free Nelson Mandela

Free Nelson Mandela! (ম্যান্ডেলার মুক্তি চাই) নামক গানের লিরিক্স,Songwriters: J. Dammers, R. Dakar
ম্যান্ডেলার কারাবন্দীত্বের সময়ে তাঁর মুক্তির জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের উপরে চাপ বাড়তে থাকে। ম্যান্ডেলার মুক্তির জন্য এই আন্দোলনের বহুল ব্যবহৃত শ্লোগানটি ছিলো, Free Nelson Mandela! (ম্যান্ডেলার মুক্তি চাই) ১৯৮৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি বোথা হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন ফ্রেডেরিক উইলেম ডি ক্লার্ক।রাজনৈতিক এই পটপরিবর্তনের পরেই ডি ক্লার্ক ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ম্যান্ডেলাকে মুক্তি দেয়ার কথা ঘোষণা করেন।

ম্যান্ডেলার কারাবন্দীত্বের সময়ে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির দূতেরা বেশ কয়েকবার তাঁর সাথে রবেন দ্বীপ ও পোলস্‌মুর কারাগারে দেখা করেন। এই সাক্ষাতগুলো সম্পর্কে ম্যান্ডেলা বলেন,
"to me personally, and those who shared the experience of being political prisoners, the Red Cross was a beacon of humanity within the dark inhumane world of political imprisonment." (ব্যক্তিগত ভাবে আমার জন্য এবং আমার মতো অন্য রাজনৈতিক বন্দীদের জন্য রেড ক্রস ছিলো কারাগারের অমানুষিক নিষ্ঠুর অন্ধকার জগতে আলোর দিশা।)
১৯৯০ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার তদানিন্তন রাষ্ট্রপতি এফ ডব্লিউ ডি ক্লার্ক আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সহ অন্যান্য বর্ণবাদ বিরোধী সংগঠনের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। একই সাথে তিনি ঘোষণা দেন, ম্যান্ডেলাকে অচিরেই মুক্তি দেয়া হবে। ভিক্টর ভার্সটার কারাগার থেকে ম্যান্ডেলাকে ১৯৯০ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি তারিখে মুক্তি দেয়া হয়। ম্যান্ডেলার কারামুক্তির ঘটনাটি সারাবিশ্বে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
http://i.telegraph.co.uk/multimedia/archive/02526/Nelson_Mandela_2526841b.jpg
মুক্তির দিনে ম্যান্ডেলা জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দেন। এই ভাষণে তিনি শান্তি রক্ষা করা ও দেশের শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাথে সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য আহবান জানান।
"our resort to the armed struggle in 1960 with the formation of the military wing of the ANC (Umkhonto we Sizwe) was a purely defensive action against the violence of apartheid. The factors which necessitated the armed struggle still exist today. We have no option but to continue. We express the hope that a climate conducive to a negotiated settlement would be created soon, so that there may no longer be the need for the armed struggle." (১৯৬০ সালে আমরা সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করতে বাধ্য হই। বর্ণবাদের হিংস্রতার হাত থেকে আত্মরক্ষার খাতিরেই আমরা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সশস্ত্র অঙ্গসংগঠন উমখান্তো উই সিযওয়ে গঠন করেছিলাম। সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করার পেছনের কারণগুলো এখনো রয়ে গেছে। তাই এ সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো পথ নেই। আমরা আশা করি, শান্তি আলোচনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ অচিরেই সৃষ্টি হবে এবং আমাদের আর সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাবার দরকার থাকবে না।)
http://www.cbc.ca/gfx/images/news/promos/2013/06/12/mandela-timeline.jpg
মেইল অ্যান্ড গার্ডিয়ানে প্রকাশিত ম্যান্ডেলাকে নিয়ে ১৪ টি তথ্য
১. জন্মের পর ম্যান্ডেলার নাম রাখা হয় রোলিহ্লাহ্লা। আঞ্চলিক ভাষায় নামটির অর্থ ‘গাছের ডাল টানা’। আর কথ্য ভাষায় এই নামের মানে দাঁঁড়ায় ‘সমস্যা সৃষ্টিকারী’। তাঁর বর্তমান নাম ‘নেলসন’ রেখেছিলেন মিশনারি বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক।

২. ছাত্রবিক্ষোভে যোগ দেওয়ার অভিযোগে ম্যান্ডেলাকে ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে তিনি পড়াশোনা শেষ করে আইনের ওপর ডিগ্রি নিয়েছেন উইটস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

৩. টেম্বু গোষ্ঠীর নেতা জোংগিনতাবা দালিন্দেবো তরুণ ম্যান্ডেলার বিয়ের আয়োজনের চেষ্টা করেছিলেন। এতে ম্যান্ডেলা ইস্টার্ন কেপ ছেড়ে পালিয়ে জোহানেসবার্গে চলে যান। সেখানে তিনি একটি খনিতে নৈশপ্রহরীর চাকরি নেন।

৪. ম্যান্ডেলা একসময় আলেক্সান্দ্রা শহরতলিতে থাকতেন। তবে পরে সোয়েটোর অর্লান্ডোতে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ওয়াল্টার সিসুলু ও তাঁর মায়ের সঙ্গে বাসায় ওঠেন।

৫. ম্যান্ডেলার প্রথম স্ত্রী ইভলিন মেজ ছিলেন একজন নার্স ও সিসুলুর আত্মীয়। এই দম্পতির চারটি সন্তান হয়েছিল। ১৯৫৮ সালে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।

৬. আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (এএনসি) সশস্ত্র শাখার প্রধান ছিলেন ম্যান্ডেলা। এ ছাড়া তিনি বন্ধু অলিভার ট্যাম্বোর সঙ্গে মিলে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মালিকানাধীন আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

৭. সশস্ত্র সংগ্রামে সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে ম্যান্ডেলা ১৯৬২ সালে দেশ ছাড়েন। মরক্কো ও ইথিওপিয়ায় গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন তিনি।

৮. ম্যান্ডেলাকে শত শত পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কানাডার সম্মানজনক নাগরিকত্ব, ব্রিটিশ লেবার পার্টি ও সে দেশের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাবের সম্মানজনক সদস্য। এ ছাড়া একটি পারমাণবিক কণার নাম রাখা হয়েছে ম্যান্ডেলা পার্টিকল। একটি প্রাগৈতিহাসিক কাঠঠোকরা ও একটি অর্কিডের নামকরণও হয়েছে ম্যান্ডেলার নামে।

৯. বর্ণবাদী সরকার ম্যান্ডেলাকে ছয়বার মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তিনি রাজি হননি। একবার তিনি বিবৃতি দেন, ‘জনগণের সংগঠন (এএনসি) যদি নিষিদ্ধ থাকে, তাহলে আমাকে কোন ধরনের মুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে?’

১০. ম্যান্ডেলা ১৯৭০-এর দশকে একটি স্মৃতিকথা লেখেন। সেটির পাণ্ডুলিপি পলিথিনে মুড়িয়ে কারাগারের বাগানে পুঁতে রাখা হয়। কর্তৃপক্ষ বাগানে একটি দেয়াল তুলতে গেলে ব্যাপারটি ধরা পড়ে যায়। শাস্তি হিসেবে ম্যান্ডেলার পড়াশোনার সব সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

১১. দ্বিতীয় স্ত্রী উইনি মাদিকিজেলা-ম্যান্ডেলার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তিনি আমিনা কাশালিয়া নামের এক বান্ধবীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হন। ৮০তম জন্মদিনে ম্যান্ডেলা বিয়ে করেন গ্রাসা ম্যাশেলকে।

১২. বর্ণবাদী সরকার এএনসিকে একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যও এএনসিকে সন্ত্রাসীর তকমা দেয়। মাত্র ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ম্যান্ডেলা ও তাঁর সংগঠনকে সন্ত্রাসীর তালিকা থেকে বাদ দেয়।


১৩. ম্যান্ডেলার জন্মদিন ১৮ জুলাইকে নেলসন ম্যান্ডেলা ইন্টারন্যাশনাল ডে হিসেবে ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। বিশ্ব সংস্থা এই প্রথমবারের মতো কোনো ব্যক্তির জন্য একটি দিন উৎসর্গ করে।

১৪. কারাগারে ম্যান্ডেলাকে মাত্র দুই মিটার চওড়া ও আড়াই মিটার লম্বা একটি প্রকোষ্ঠে রাখা হয়। শোয়ার ব্যবস্থা ছিল মেঝেতে। আর শুধু ছিল মলমূত্র ত্যাগের জন্য একটি বালতি। প্রথম দিকে প্রতি ছয় মাসে একজনমাত্র দর্শনার্থীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও একটি চিঠি লিখতে পারতেন ম্যান্ডেলা।
তথ্যসূত্রঃ
১।In the words of Nelson Mandela,Edited by Jenifer Williams
২।টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ জন ব্যক্তিত্বের তালিকায় ম্যান্ডেলার জীবনী
৩।মেইল অ্যান্ড গার্ডিয়ান
৪।এএফপি
৫।উইকিপিডিয়া
Previous Post
Next Post

post written by: