দেশের ৩০ হাজার তথ্যপ্রযুক্তি প্রকৌশলী
কাজ করছেন সারা বিশ্বের সহস্রাধিক প্রতিষ্ঠানের হয়ে। কাজগুলো
অনলাইনে সারছেন তাঁরা। এ ছাড়া আউটসোর্সিংয়ে জড়িত আছেন লাখের বেশি তরুণ। সংখ্যাটি
ক্রমেই বাড়ছে। তবে অনেকে না বুঝেই ফ্রিল্যান্সিংয়ে নেমে পড়েন। সাফল্য পেতে
কিন্তু জানতে হবে প্রয়োজনীয় কিছু বিষয়।
ফ্রিল্যান্সিং কী------গতানুগতিক চাকরির বাইরে নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করার নামই ফ্রিল্যান্সিং বা মুক্ত পেশা। আর এই পেশায় যিনি জড়িত তাঁকে বলে ফ্রিল্যান্সার। তিনি কোনো প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী নন।
কাজের ধরন বা প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী চুক্তিতে আবদ্ধ
হন। তিনি পারিশ্রমিক পান সময় হিসেবে অথবা
কাজের ধরনের ওপর। বিভিন্ন অনলাইন
মার্কেট প্লেস বা ওয়েবের মাধ্যমে কাজ দেওয়া-নেওয়া হয়। ইন্টারনেটে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস
যেমন www.oDesk.com ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো ফ্রিল্যান্সারদের কাজ দিয়ে থাকে। স্বল্প সময়ের কাজগুলোই আউটসোর্স করা হয় বেশি। অনেক প্রতিষ্ঠান স্থায়ী নিয়োগ দেওয়ার চেয়ে
ফ্রিল্যান্সারদের দিয়ে কাজ করাতে আগ্রহী থাকে। জেনে রাখা ভালো, প্রতিষ্ঠান
চাইলে কোনো ফ্রিল্যান্সারকে প্রকল্পের মাঝামাঝি সময়ও বাদ দিতে পারে এবং নতুন কর্মী
নিয়োগ করতে পারে।
ইন্টারনেটে যা করা যায়
ইন্টারনেটে যেসব কাজ করা সম্ভব, তার সবই করতে পারেন একজন ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং
কর্মী। অনেকে মনে করেন, আউটসোর্সিং কেবল ওয়েবসাইট ডিজাইন এবং
ডেভেলপমেন্টের মতো কাজগুলোতেই সীমাবদ্ধ। ব্যবসায়
শিক্ষা অনুষদের একজন শিক্ষার্থী চাইলে কোনো প্রতিষ্ঠানের হিসাব-নিকাশ করে কিংবা
অর্থনৈতিক অবস্থার বিশ্লেষণ করেও অনেক টাকা উপার্জন করতে পারেন। অনলাইন মার্কেটপ্লেসে অনেক রকম কাজ থাকে। একজন ফ্রিল্যান্সার তাঁর দক্ষতা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট
কাজ করতে পারেন। এসবের মধ্যে রয়েছে_ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব
ডিজাইন, সফটওয়্যার/অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, ব্লগ/আর্টিকেল রাইটিং, ডাটা এন্ট্রি, গ্রাফিকস
ডিজাইন, কাস্টমার সাপোর্ট, সেলস/অনলাইন মার্কেটিং, অনলাইন সার্ভে, প্রজেক্ট
ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি। যাঁরা ওয়েব
ডেভেলপমেন্ট ও ডিজাইন করতে চান তাঁরা ওয়ার্ডপ্রেস, সিএসএস, পিএইচপি, এইচটিএমএল, জুমলাসহ পছন্দ অনুযায়ী বিভাগ বেছে নিতে পারেন। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে ডেস্কটপ
অ্যাপ্লিকেশন, মোবাইল অ্যাপস নির্বাচন করতে পারেন। যাঁরা ইংরেজিতে দক্ষ ও যেকোনো লেখা লিখতে পারেন
তাঁরা ব্লগ/আর্টিকেল রাইটিং করতে পারেন। এ
ক্ষেত্রে কোনো ব্লগের জন্য পোস্ট বা রিভিউ রাইটিং করা যাবে। ডাটা এন্ট্রির ক্ষেত্রে রয়েছে পিডিএফ থেকে এক্সলে
শিট সম্পাদন, ক্যাপচা (ই-মেইলে নিরাপত্তার জন্য শব্দ বা
সংখ্যা ব্যবহারের উপায়) এন্ট্রি ইত্যাদি। গ্রাফিকস
ডিজাইনের ক্ষেত্রে অ্যাডবি ইলাস্ট্রেটর, ফটোশপ
ইত্যাদি যেকোনো বিষয় নির্বাচন করতে পারেন। আর
কাস্টমার ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ই-মেইল রেসপন্স, কল রেসপন্স বা কলসেন্টার সার্ভিস দেওয়া যাবে। জনপ্রিয় আরেকটি বিষয় সেলস মার্কেটিং ক্যাটাগরিতে
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন [এসইও], মার্কেট রিসার্চ, সোশ্যাল মার্কেটি ইত্যাদি।
যা প্রয়োজন
ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফলতার মূলমন্ত্র হলো
মেধা বা দক্ষতা। ধৈর্যও থাকতে হবে। আমাদের ফ্রিল্যান্সারদের প্রধান সমস্যা ইংরেজি না
জানা বা কম জানা। গার্টনারের জরিপেও
একই তথ্য পাওয়া গেছে। যেহেতু বিদেশি
বায়ারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করতে হয়, সে
জন্য ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। নতুবা
বায়ারের প্রয়োজন বোঝা সহজ হয় না। আপনার
সমস্যাও তাঁকে বুঝিয়ে বলতে অসুবিধায় পড়বেন। ইংরেজিতে
যাঁরা দুর্বল তাঁরা তাই বলে ভড়কে যাবে না। আপনার
আসলে চলনসই ইংরেজি জানা প্রয়োজন হবে। এমন
ইংরেজি রপ্ত করতে দুই থেকে তিন মাস লাগবে। আর
ইন্টারনেট সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার। কাজ
করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সময়সীমার দিকে লক্ষ রাখবেন। পারলে ডেডলাইনের আগেই কাজটি শেষ করা ভালো। এ ছাড়া ভালো রেটিং পাওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করার
মানসিকতা রাখতে হবে। দ্রুত কাজের জন্য
আপনার একটি ভালোমানের কম্পিউটার ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। আর কাজের ধরন অনুযায়ী স্ক্যানার, ডিজিটাল ক্যামেরা বা অন্য কোনো যন্ত্রেরও প্রয়োজন
পড়তে পারে।
দক্ষতা অনুযায়ী কাজ বেছে নেওয়া
নিজের দক্ষতা বা পছন্দ অনুযায়ী কাজ খুঁজে
বের করা ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়ার অন্যতম পূর্বশর্ত। একজন ফ্রিল্যান্সারের প্রথম কাজ তিনি কী করবেন সেটি
নির্ধারণ করা। বিষয় নির্ধারণ করে
সে ক্ষেত্রে নিজেকে তেমনভাবে যোগ্য করে তোলা দরকার। কারণ আন্তর্জাতিক মার্কেটে অভিজ্ঞদের সঙ্গে বিড
করে কাজ পেতে হবে।
প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ
সফটওয়্যার বা ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট কিংবা
কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট যা-ই হোক না কেন, সে
বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। বিষয়টি
ভালোভাবে জানতে প্রশিক্ষণ নেওয়া যেতে পারে। মার্কেটপ্লেসে
যেহেতু দক্ষতা থাকা ছাড়া কোনো কাজ করা যায় না, তাই
দক্ষতা অর্জনই ফ্রিল্যান্সিং শুরুর প্রথম ধাপ। আপনার পছন্দের কাজের ওপর সার্বিক দক্ষতা অর্জন
করতে হবে।
মার্কেটপ্লেস নির্বাচন
মার্কেটপ্লেস বলতে বোঝায় যেখানে কাজ পাওয়া
যায় বা কাজ দেওয়া যায়। যাঁরা এসব সাইটে
কাজ দেয় তাঁদের বলা হয় বায়ার বা ক্লায়েন্ট। আর
যাঁরা এ কাজগুলো সম্পন্ন করেন তাঁদের বলা হয় কোডার বা প্রোভাইডর। কোডার একটি কাজের জন্য বা প্রজেক্টের জন্য বিড বা
আবেদন করে। কত দিনের মধ্যে
প্রজেক্ট জমা দিতে হবে,
কত টাকায় তা সম্পন্ন করতে হবে_সব বিষয় পরিষ্কার উল্লেখ থাকে। কোডাররা আবেদন করার পর ক্লায়েন্ট যাকে ইচ্ছা তাকে
কাজটির জন্য নির্বাচন করতে পারেন। ক্লায়েন্ট
সাধারণত কোডারের পূর্ব অভিজ্ঞতা, বিড করার সময়
কোডারের মন্তব্য ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে। কোডার
নির্বাচিত হওয়ার পর ক্লায়েন্ট কাজের টাকা সাইটগুলোতে জমা করে দেয়। কোডার কাজ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাওয়ার
নিশ্চয়তা পেয়ে যান। যে সাইটের মাধ্যমে
কাজটি পাওয়া গেছে সে সাইটটি নির্দিষ্ট কমিশন রেখে বাকি টাকা কোডারের অ্যাকাউন্টে
জমা করে দেয়। আর এসবে মাধ্যম
হিসেবে কাজ করে মার্কেটপ্লেস। ফ্রিল্যান্সিংয়ের
ক্ষেত্রে অনেক সাইট রয়েছে। এ
ধরনের জনপ্রিয় কিছু সাইট হলোঃ www.oDesk.com, www.freelancer.com , www.scriptlancer.com , www.RentACoder.com , www.elance.com , www.Joomlancers.com , www.GetAFreelancer.com । এসব সাইটে বিনা মূল্যে নিবন্ধন করে শুরু করা যেতে
পারে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ। নিবন্ধনের
আগে অবশ্যই সাইটটির নিয়মাবলি, কাজ পাওয়ার যোগ্যতা, পেমেন্ট মেথড সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে।
আবেদনের প্রস্তুতি
নিবন্ধনের পরপরই ভালো একটা কাভার লেটার
তৈরি করা উচিত, যা ক্লায়েন্টের কাছে কাজের আবেদনের সময়
লাগবে। সঙ্গে একটি ভালো
পোর্টফোলিও তৈরি করতে হবে। বায়ার
কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে মূলত এই পোর্টফোলিও বা কাজের অভিজ্ঞতার বিষয়টি বিবেচনা করেন। রেজিস্ট্রেশন করার সময় ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা, ই-মেইল
ইত্যাদি সঠিকভাবে দিতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের
একটি ধাপে আপনার একটি প্রোফাইল/রেজিউমে তৈরি করতে হবে, যেখানে আপনি কোন কোন ক্ষেত্রে পারদর্শী তা উল্লেখ
করবেন। এখানে আপনি আপনার ওয়েবসাইট লিংক দিতে পারেন। মনে রাখতে হবে, প্রোফাইলটি
যত পেশাদার হবে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে তত বেশি। তবে কোনো মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া ঠিক হবে না। কোনো কাজ গ্রহণের আগে সেটির সময়সীমা, বাজেট ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো ভালোভাবে জেনে নিতে
হবে। আর ক্লায়েন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই
সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। পারলে
সেই ক্লায়েন্টের কোনো রিভিউ দেখে নেওয়া উচিত।
বিড করার আগে
রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হওয়ার পর আপনি বিড
করা শুরু করতে পারেন। তবে প্রথম কয়েক দিন
পর্যবেক্ষণে থাকাই ভালো_পছন্দের কাজগুলো খেয়াল করুন, ক্লায়েন্ট চিনে নিন ইত্যাদি। এ ছাড়া ওয়েবসাইটের বিভিন্ন নিয়মকানুন এবং
সাহায্যকারী আর্টিকেল পড়ে ফেলতে পারেন। মার্কেটপ্লেসে
নতুন কাজ আসতেই থাকে। তবে প্রথম দিকে কাজ
পাওয়া সহজ হয় না। তাই আপনাকে ধৈর্য
ধরে বিড করে যেতে হবে। প্রথম কাজ পেতে ২০ দিনও
লেগে যেতে পারে। কয়েকটি কাজ সফলভাবে
সম্পন্ন করার পর আপনাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। তখন ক্লায়েন্টই আপনাকে খুঁজে নেবে।