নতুন কম্পিউটার কিনেছেন? তাহলে প্রাথমিক অবস্থায় অবশ্যই করণীয় কিছু কাজ দেখে নিন

আপনার পিসিটি সম্পূর্ণ নতুন হয়ে থাকলে তাতে অনেক কাজ করা যায়। এই নতুন পিসিতে কাজ শুরু করার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি আমাদের খেয়াল রাখতে হয়, যা হয়তো অনেকেরই অজানা। আর এ উদ্দেশ্যে এবারের টিউনে উপস্থাপন করা হয়েছে কিছু প্রয়োজনীয় টিপ ও ট্রিকসের পর্যায়ক্রমিক ধাপ, যা অনুসরণ করলে নতুন পিসিতে কাজ করতে যেমন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন তেমনি পাবেন কাজে অনাবিল আনন্দ।

new computer 500x368 নতুন কম্পিউটার কিনেছেন বা সেটআপ দিয়েছেন তাহলে প্রাথমিক অবস্থায় অবশ্যই করণীয় কিছু কাজ দেখে নিন আপনার পিসির জন্য
তৈরি করুন vLile ইনস্টল ডিস্ক

যদি আপনার নতুন পিসিটি আগে থেকে তৈরি করা থাকে অর্থাৎ আপনার পছন্দ অনুযায়ী তৈরি নয়- এমন অবস্থায় সিস্টেমের সাথে বাড়তি বোনাস হিসেবে পাবেন টুলবারসহ অন্যান্য ক্র্যাপওয়ার। আপনি ইচ্ছে করলে আরো কর্মক্ষমতা পেতে পারেন এই সিস্টেম থেকে উইন্ডোজকে রিইনস্টল করে। উইন্ডোজ রিইনস্টল করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে vLile ইনস্টল ডিস্ক থাকে। এ টুল এমন এক টুল যাতে উইন্ডোজ ৭ বা ভিসতা কাস্টোমাইজ করার সুবিধাসহ স্লিম করার সব ফিচার সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আপনি ইচ্ছে করলে ডিস্কে ড্রাইভার ও হটফিক্স যুক্ত করতে পারেন, যা উইন্ডোজের সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনস্টল হয়। ফলে পরবর্তী পর্যায়ে সময় সেভ হয়। vLile ডিস্কের জন্য দরকার উইন্ডোজ ৭।
যথাযথভাবে সেটআপ করুন নেটওয়ার্ক ও সার্ভার কানেকশন

কোনো পিসিই বর্তমানে একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। আপনার পিসি সবচেয়ে বেশি কর্মশক্তিসম্পন্ন হবে যখন ইন্টারনেট ও অন্যান্য লোকাল নেটওয়ার্ক পিসির সাথে যুক্ত হবে। সুতরাং এক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে খেয়াল রাখতে হবে লোকাল নেটওয়ার্ক সেটআপ যথাযথভাবে করা হয়েছে কি না। অর্থাৎ ইথারনেট ক্যাবল রাউটারে ঠিকভাবে প্লাগইন হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রথমে আপনাকে পিসির ওয়ার্কগ্রুপ ডোমেইনকে কনফিগার করতে হবে যাতে নেটওয়ার্কের অন্যান্য সিস্টেমকে এটি শনাক্ত করতে পারে। যদি উইন্ডোজ ৭ ব্যবহার করেন, তাহলে আপনাকে নির্দিষ্ট করতে হবে যে এটি হোম ওয়ার্ক বা পাবলিক নেটওয়ার্ক কি না। এর ফলে আপনি টোয়েক করার সুযোগ পাবেন যাতে ফাইল, ফোল্ডার ও প্রিন্টার শেয়ারিং অপশন অন্যদের সাথে যথাযথভাবে কাজ করে। এক্ষেত্রে আপনাকে লোকাল কানেকশনকে নিরাপদ করার জন্য ফাইল শেয়ারিং এনক্রিপশন সেটিংকে ১২৮ বিটে সমন্বয় করতে হবে।
ইন্টারনেট সংযোগকে আরো কার্যকর করার জন্য OpenDNS-এ সুইচ করা দরকার। যদি আপনার পিসিতে গেমিং ও P2P ফাইল শেয়ারিং করতে চান, তাহলে আপনাকে পোর্ট কনফিগার করতে হবে ওই সব অ্যাপ্লিকেশনের জন্য। এ সম্পর্কে বিস্তারিত গাইড পাওয়া যাবে http://portforward.com সাইটে।
পরিশেষে আপনার পিসিকে লিঙ্ক করুন লোকাল নেটওয়ার্কের যেকোনো NAS বক্স বা উইন্ডোজ হোম সার্ভারে। এই সার্ভার ব্যবহার করুন আপনার মিডিয়া ডাটাবেজ স্টোর বা ব্যাকআপ করার জন্য।
প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশন ও ইউটিলিটি ইনস্টল করা

সফটওয়্যার হচ্ছে আপনার নতুন সিস্টেমের জন্য প্রসেসিং শক্তির কাঁচামালস্বরূপ, যা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করা যায়। অবশ্য সফটওয়্যারে প্রয়োজনীয়তা বা ব্যবহার ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন হয়। প্রথমেই আপনাকে সিস্টেমকে নিরাপদ করতে হবে অ্যান্টিভাইরাস ও অ্যান্টিম্যালওয়্যার দিয়ে।
পুরনো পিসি থেকে ফাইল রিস্টোর করা

যদি পুরনো পিসি থেকে ডাটা ব্যাকআপ করেন, তাহলে তা ট্রান্সফার করতে হবে। উইন্ডোজ ৭ এবং ভিসতায় প্রয়োজনীয় ফাইল অবস্থান করে C:Usersusername, যেহেতু আপনার নতুন ডিভাইসটি সম্পূর্ণ খালি, তাই আপনি ডেস্কটপ ডিরেক্টরির কনটেন্ট কপি করতে পারবেন।
উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহারকারীরা আইটিউন ফোল্ডার খুঁজে পাবেন পুরনো ড্রাইভে C:Documents and SettingsusernameMy DocumentsMy MusiciTunes-এ খুঁজে। আর ভিসতার ব্যবহারকারীরা খুঁজে দেখতে পারেন UsersusernameMusiciTunes. লোকেশনে। এখান থেকে কনটেন্ট কপি করে নতুন ড্রাইভের একই জায়গায় নিয়ে আসুন।
ডেস্কটপ কাস্টোমাইজ করা

সব অ্যাপ্লিকেশন এবং ফাইল যথাযথ স্থানে রাখার পর কাস্টোমাইজের পালা। নিজস্ব সৌন্দর্যবোধ দিয়ে Windows UI-কে কাস্টোমাইজ করুন। UI-এর কাজ শুধু সৌন্দর্যবর্ধন করাই নয় বরং এর ফাংশনালিটিকে বাড়ানো যায়। ডেস্কটপকে উইন্ডোজ থিম থেকে ভিন্নতা দেয়া যায়।
ডেস্কটপ পুনর্গঠনের জন্য দুটিই উপায় রয়েছে। যেমন সামুরাইজ ও রেইনমিটার। উভয় ইউটিলিটির মাধ্যমে তৈরি ও ইমপোর্ট করতে পারবেন কাস্টোম ইউআই এবং ব্যবহার করতে পারবেন শক্তিশালী অ্যাপলেট যা দিয়ে মনিটর ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন সিস্টেম সেটিংসমূহ।
বেঞ্চমার্ক

প্রত্যেক নতুন পিসির ক্ষেত্রে কেনার বা ব্যবহার করার আগে দরকার রুটিনমাফিক বেঞ্চমার্ক টেস্ট করা। সিস্টেম বেঞ্চমার্কের মাধ্যমে নতুন পিসির গুণগতমান যাচাই করতে পারবেন, একই কনফিগারেশনের অন্য পিসির ক্ষমতা তুলনা করতে পারবেন, সিস্টেম বটলনেক চিহ্নিত করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, বেঞ্চমার্কের মাধ্যমে ওভারক্লকিং ও টোয়েকিংয়ের সুবিধাও পরিমাপ করতে পারবেন।
বেঞ্চমার্ক দুই ক্যাটাগরির হয়ে থাকে। যেমন সিনথেটিক এবং রিয়েলওয়ার্ল্ড। সিনথেটিক টেস্ট মূলত অন্যান্য সাধারণ অ্যাপ্লিকেশনের কমপিউটেশনাল লোডকে নকল করে। আর রিয়েলওয়ার্ল্ড বেঞ্চমার্কে সেটিংসহ প্রকৃত ডেস্কটপ অ্যাপ্লিকেশন রান করানো হয়, যা সাধারণ ব্যবহারকারীরা পেয়ে থাকেন। এ টেস্টে সম্পৃক্ত থাকে ফটোশপ স্ক্রিপ্ট অথবা গেম ডেমো।
সেলফ-মনিটরিং অ্যানালাইসিস অ্যান্ড রিপোর্টিং টেকনোলজি বা S.M.A.R.T

আধুনিক হার্ডডিস্কের আকর্ষণীয় ফিচার হলো সেলফ-মনিটরিং অ্যানালাইসিস অ্যান্ড রিপোর্টিং টেকনোলজি বা S.M.A.R.T, যা ব্যবহারকারীকে সতর্ক করতে পারে হার্ডডিস্ক ফেইল করার আগে। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত অপারেটিং সিস্টেম এ ব্যাপারে খেয়াল করে না। তবে আপনি এ ব্যাপারে সহায়তা পেতে পারেন SpeedFan এবং ডিস্ক ক্লিনআপ ইউটিলিটি ব্যবহারের মাধ্যমে।
ব্যাকআপ স্ট্র্যাটেজি বাস্তবায়ন করা

বর্তমানে ভাইরাস, হ্যাকারের দৌরাত্ম্য অনেক বেড়ে গেছে আগের তুলনায়। তাই তথ্যের নিরাপত্তার জন্য দরকার নিয়মিতভাবে ব্যাকআপ করা। এজন্য দরকার একটি ব্যাকআপ স্ট্র্যাটেজি। উইন্ডোজ ৭-এ সম্পৃক্ত করা হয়েছে এক চমৎকার ফিচার, যা ‘ব্যাকআপ অ্যান্ড রিস্টোর’ নামে পরিচিত যা আপনাকে সুনির্দিষ্ট ভলিউমে ব্যাকআপ সিডিউলের সুবিধা দেবে। শুধু তাই নয়, এ সিস্টেম ক্র্যাশ করলে দ্রুতগতিতে বুট করার জন্য রিকভারি এনভায়রনমেন্ট ডিস্ক তৈরির সুবিধাও এতে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। যদি আপনি উইন্ডোজের হোম প্রিমিয়াম ভার্সন ব্যবহার করেন যাতে সম্পূর্ণ ব্যাকআপ ফিচার নেই, তাহলেও ‘অ্যাকশন টিউন ইমেজ’ বা ‘ড্রাইভ ইমেজ এক্সএমএল’-এর মতো সফটওয়্যার ব্যবহার করে ড্রাইভ ইমেজ তৈরি করতে পারবেন।
বায়োস অপটিমাইজ করা

বেশিরভাগ ব্যবহারকারীই বায়োসের গুরুত্বকে এড়িয়ে যান বা বুঝতে পারেন না। ফলে তারা ওএসের ওপর অনেকাংশ নির্ভর করেন। তবে অভিজ্ঞ ব্যবহারকারীরা জানেন কিভাবে বায়োসকে হ্যান্ডেল করতে হয়। বর্তমানে দু’ধরনের বায়োস ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। যেমন AMI এবং Award/Phonix। গিগাবাইট ব্যবহার করে অ্যাওয়ার্ড বায়োস যা অনেকটা আসুস বোর্ডের অ্যাওয়ার্ড বায়োসের মতো।
পিসি পাওয়ার এফিসিয়েন্ট

যেহেতু নোটবুকের মতো ডেস্কটপ পিসিতে ব্যাটারি নেই তাই হয়তো ভাবতে পারেন ডেস্কটপে পাওয়ার এফিসিয়েন্সি হওয়া তেমন গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর নয়। তবে এখন প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। এখন সবকিছুই হচ্ছে পরিবেশবান্ধব।
আপনার পিসিকে আরো বেশি পরিবেশবান্ধব করতে পারেন কন্ট্রোল প্যানেলের মাধ্যমে। কন্ট্রোল প্যানেলে Power Settings ওপেন করুন। ক্লিক করুন Advanced Settings বাটনে এবং Monitor-off, Sleep, hibernate times-এ যতটুকু সম্ভব কমিয়ে সেট করুন।
Previous Post
Next Post

post written by: