কম্পিউটার ভাইরাসের প্রাথমিক ইতিকথা

কম্পিউটার ভাইরাস ! যারা সবে মাত্র কম্পিউটার সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে শুরু করেছে তাদের জন্যে রীতিমত ভীতিকর ব্যাপার এটা। তবে যারা দীর্ঘদিন যাবত কম্পিউটার ব্যবহার করে আসছেন তাদের জন্যে হয়তো ততোটা মাথা ব্যথার কারণ না কম্পিউটার ভাইরাস। যখন বাসায় নিজস্ব কোন কম্পিউটার ছিলোনা আমার তখনও কম্পিউটার বিষয়ে আমার আগ্রহের কমতি ছিলোনা। বেশ অনেকগুলো কম্পিউটার
http://static4.depositphotos.com/1000488/282/i/950/depositphotos_2821069-Computer-Virus.jpg
বিষয়ক ম্যাগাজিন পড়তাম। আর নানান রকম বইতো আছেই। সেগুলোর কোন একটি থেকে হয়তো কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে প্রথম ধারণা পেয়েছিলাম। রীতিমত তাজ্জব বনে গিয়েছিলাম ! মানুষের ভাইরাস হয় বলে শুনেছি কিন্তু কম্পিউটারের ভাইরাস হয় কিভাবে? এতো যন্ত্র ! যন্ত্রেরও ভাইরাস ! বেশ অনেকদিন ভেবেও কোন কূল কিনারা করতে পারিনি। বই আর ম্যাগাজিনগুলোতে ভাইরাসের কথা তাদের কাজের কথা সম্পর্কে লেখা থাকলেও আসলে যে এই ভাইরাসটা কি বা দেখতে কেমন তা দেওয়া ছিলোনা। ভাবতে লাগলাম এই ভাইরাস কি মানুষের শরীরেও কাজ করতে পারে? কম্পিউটার ভাইরাসে ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে যেহেতু তখন জেনে গিয়েছিলাম সেহেতু সেই মুহুর্তে মাথায় ঘুরছিল এতো মারাত্মক ভাইরাস যদি মানুষের দেহে কাজ করে তাহলে কি অনর্থই না ঘটবে ! মুহূর্তের মধ্যেই একটা মানুষকে অচল করে দিবে কম্পিউটারের মতো !

যাইহোক, সময় যত গড়িয়েছে প্রযুক্তি বিষয়ক ধ্যান-ধারণার ততোই পরিবর্তন হয়েছে। ধীরে ধীরে বুঝলাম কম্পিউটার ভাইরাস আসলে মানুষের শরীরে বা অন্য কোন প্রাণীর শরীরে আক্রমণ করে এমন কোন ভাইরাস না। কম্পিউটার ভাইরাস আর প্রাণীর ভাইরাসে মধ্যে যে বিস্তর পার্থক্য তা অনুধাবন করলাম। নিজের অজান্তেই অনেক হেসেছি এ নিয়ে যে এক সময় কেমন ধারণাটাই না ছিল আমার কম্পিউটার ভাইরাস নিয়ে ! আপনাদের প্রথম কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কিত স্মৃতি শেয়ার করতে ভুলবেন না, কেমন ধারণা ছিল আপনার প্রথমে তাও জানাবেন কমেন্টে।
আলোচনার মূল অংশে চলে আসা যাক। কম্পিউটার ভাইরাস কি আর তার প্রকারভেদ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো। যথাসম্ভব টেকনিকাল টার্মগুলো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হবে যাতে সর্বস্তরের পাঠকই বুঝে উঠতে পারেন।

কম্পিউটার ভাইরাস কি?

কম্পিউটার ভাইরাস

কম্পিউটার ভাইরাস প্রাণীদেহে কাজ করে এমন ভাইরাসগুলোর মতো না, অর্থাৎ জীবন্ত কিছু না। যেকোনো কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা কম্পিউটারের ক্ষতি সাধন করে তাই কম্পিউটার ভাইরাস। ধরা যাক ছোট্ট কয়েক লাইনের ব্যাচ কোড করা হলে। এর কাজ তেমন জটিল না, প্রোগ্রামে কমান্ড দেয়া থাকবে যে সে কম্পিউটারের প্রতিটি ড্রাইভে তার একটি প্রতিলিপি তৈরি করবে এবং তা রান করবে। আর এও কমান্ড দেয়া থাকবে যাতে ব্যাচ ফাইলটা যে ড্রাইভে আছে সে ড্রাইভের সব ফাইল ডিলিট করে দেয়। অর্থাৎ ফাইলটা রান করলেই ড্রাইভের সব ফাইল ডিলিট হয়ে যাবে ! মাত্র কয়েক লাইনের ব্যাচ কোড অথচ কত বড় ক্ষতি করে ফেলতে সক্ষম ! অনেক দরকারি ফাইল-পত্র, তথ্য, ছবিসহ অনেক কিছুই থাকতে পারে যা হারালে লক্ষাধিক টাকারও ক্ষতি হতে পারে।
অর্থাৎ যেকোনো কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা কম্পিউটারের ক্ষতি করে তাকেই কম্পিউটার ভাইরাসের আওতায় ফেলা যায়। তবে উপরোল্লিখিত ধরণের ভাইরাসগুলো অ্যাণ্টিভাইরাস প্রোগ্রামগুলো সহজেই রুখে দিতে পারে। তাই অ্যাণ্টিভাইরাসের নিরাপত্তা বেষ্টনীকে ফাকি দিয়ে কাজ করার জন্যে নিত্য-নতুন ভাইরাস তৈরি হচ্ছে। সেগুলো নিজেকে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে নিজেকে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। দেখা যাবে কোন ভাইরাস আপনার কোন বন্ধুর কম্পিউটারে আছে এবং সেটি নিজেকে মুহূর্তেই কপি করে অন্য কোথাও ছড়িয়ে দিতে সক্ষম তখন আপনি যদি আপনার কোন পেন ড্রাইভ বা অন্য কোন ইউএসবি ডিভাইস সেই কম্পিউটারে সংযুক্ত করেন তখন হয়তো সেই ভাইরাস তার একটি কপি আপনার পেন ড্রাইভে ছড়িয়ে দিবে। এভাবে সেই পেন ড্রাইভ আপনি আপনার পিসিতে সংযুক্ত করলে আপনার পিসিতেও ছড়ানোর সম্ভাবনা আছে এবং এভাবে একের পর এক কম্পিউটারে ছড়াতে থাকবে যদি না নিরাপত্তার জন্যে ভালো কোন অ্যাণ্টিভাইরাস থাকে।
কম্পিউটার ভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকার জন্যে অবশ্যই ভালো কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখতে হবে। বাজারে অনেক কোম্পানির অ্যাণ্টিভাইরাসই পাওয়া যায়, সেগুলো থেকে চলতি বছরের নির্ভরযোগ্য কোন অ্যাণ্টিভাইরাস ব্যবহার করাটাই শ্রেয়। আর নিয়মিত আপডেট করে নেয়া সম্ভব হলে কম্পিউটার ভাইরাসের আক্রমণ থেকে কম্পিউটারকে মোটামোটি নিরাপদ বলা যেতে পারে।
লেখা শেষ করছি ২০১২ এর ভয়ংকর একটি ভাইরাসের কথা দিয়ে। যার নাম ফ্লেইম, তবে ফ্লেইমার, স্কাইওয়াইপারও বলা হয়। ২৮ই মে ২০১২ তে এই ভাইরাস সর্বপ্রথম শনাক্ত করা হয়। এটিই প্রথম ব্লুটুথের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেকে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম ছিল।
Previous Post
Next Post

post written by: