ইন্টারনেটে ফ্রীল্যান্স লেখালেখি এবং উপার্জন বিস্তারিত

ই-কমার্স বা অনলাইন বিজনেস সম্পর্কে আমরা সবাই হয়তো কিছু না কিছু জানি। কিন্তু, ইন্টারনেটের বদৌলতে আমাদের নিজস্ব সৃজনশীল প্রতিভাকে আমরা কিভাবে কাজে লাগাতে পারি, সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই মোটেই সচেতন নই। আপনি কি জানেন, কোনরকম দৈহিক পরিশ্রম বা পুঁজি ছাড়াই শুধুমাত্র আপনার মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়ে আপনি ঘরে বসেই মোটামুটি সম্মানজনক একটা আয় করতে পারেন? এই আয় হতে পারে আপনার প্রধান আয়ের চেয়ে অনেকগুন
বেশি। আপনি যদি একজন কম্পিউটার/সফটওয়ার্ প্রোগ্রামার, গ্রাফিক ডিজাইনার, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর অথবা ওয়েব ডেভেলপার হয়ে থাকেন, তাহলে ইন্টারনেট কর্মসংস্থান সাম্রাজ্যের অনেকটাই আপনার। মাসিক ভিত্তিতে আপনার জন্য হাজার কিংবা লাখ ডলারের কাজ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। ওয়েবে যেয়ে খুঁজলেই আপনি পেয়ে যাবেন এই অফুরন্ত সম্ভবনা। কিভাবে? একজন দক্ষ কম্পিউটার ব্যবহারকারী হিসেবে সেকথা আপনাকে বলা বাহুল্য। এই লেখাটি যেহেতু সাধারণ কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য লেখা, আমাদের বিষয়বস্তুটি কিছুটা ভিন্ন।

লেখালেখির কাজ আমরা অনেকেই করে থাকি। কেউ হয়তো নিতান্তই আত্ত্বিক বা মানসিক পরিতৃপ্তির জন্যই লিখে থাকি। কেউ হয়তো কাগজে বা ম্যাগাজিনে এই লেখালেখির মাধ্যমে কিছুটা উপার্জনও করি। কিন্তু আপনি জানেন কি, ইন্টারনেটে লেখকদের জন্য রয়েছে এক অমিত সম্ভবনা। শুধুমাত্র কয়েকশ শব্দের বিনিময়ে আপনি প্রতিদিন আয় করতে পারেন বেশ কিছু ডলার। ইন্টারনেটে মেধাভিত্তিক কাজের মাধ্যমে ঘরে বসে যারা আয় করতে উৎসাহী, তাদের অনেকই জানেন না কোথায় শুরু করতে হবে। যারা লেখক হিসেবে এই সুযোগটি কাজে লাগাতে চান, তাদের অবস্থাও একই রকম। আমি এই শুরু করা সম্পর্কেই কিছু কথা বলব। তার আগে, আসুন জেনে নেই কি ধরনের কাজ আপনার জন্য এই সম্ভাবনাময় জগতে অপেক্ষা করছে। ইন্টারনেটের লেখকদের জগত মূলতঃ দুটি ভাগে বিভক্ত। প্রথমটি পেশাদার লেখকদের জন্য আর অপরটি ফ্রীল্যান্স লেখকদের। দুটি জগতেই রয়েছে নিম্নলিখিত ধরনের কাজঃ
• Essay/paper/research writing
• Article writing
• Creative writing (গদ্য, কবিতা, সিনেমা বা বিজ্ঞাপনের কাহিনী ইত্যাদি)।
• Technical writing (টেকনিক্যাল ম্যানুয়াল, how-to articles ইত্যাদি)
• Website content writing (ওয়েবসাইটের বিভিন্ন শাখার লেখা)
• Copywriting (কোন পণ্যের বাজারজাতকরণের জন্য promotional content লেখা)
• News/press release writing
• Blog posting (ব্লগ এ লেখা)
• Forum posting (ফোরাম এ লেখা)
• Review writing (কোন পণ্যের গুণগত বিশ্লেষণ লেখা)
• SEO অথবা Search Engine Optimization Writing (কোন বিষয়কে এমনভাবে লেখা যেন তা search engine সহজে খুঁজে পায়)।
• Rewriting (পুনঃলিখন)।
পেশাদার লেখার কাজ
আপনি যদি পেশাদার লেখক হন, তাহলে বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইটে আপনি সদস্য হয়ে লিখতে পারেন। এখানে আপনাকে নির্দিষ্ট চুক্তির অধীনে কাজ করতে হবে আর আপনাকে কিছু বিষয়ে সম্যক জ্ঞান রাখতে হবে, যেমনঃ
• চুক্তির বিভিন্ন শর্তসমূহ।
• পেশাদার লেখকদের জন্য নির্দিষ্ট নিয়মকানুন।
• বিভিন্ন প্রচলিত লেখনীর ধরন যেমন MLA অথবা APA স্টাইল।
• ভাষার উপর যথেষ্ট দখল।
পেশাদার লেখার কাজটা একটু জটিল এবং এর বাধ্যবাধকতাও অনেক। তবে পেশাদার লেখকদের সম্মানীর পরিমাণটাও বহুলাংশে বেশি।
ফ্রীল্যান্স লেখার কাজ
অপরদিকে আপনি যদি নিতান্তই একজন সাধারণ বা ফ্রীল্যান্স লেখক হয়ে থাকেন, ইন্টারনেটে আপনার জন্য আছে বিস্তর কাজ। আসুন জেনে নেই, কোথায় এবং কিভাবে আপনি এই বিশাল জগতে পা বাড়াবেন।
ফ্রীল্যান্স আর্টিকেল ডিরেক্টরি বা সাইট
ফ্রীল্যান্স লেখকদের জন্য বেশ কিছু ওয়েবসাইট আছে যা মূলতঃ article directories হিসেবে পরিচিত। ফ্রীল্যান্স লেখকদের জন্য বেশ কিছু ওয়েবসাইট আছে যা মূলতঃ article directories হিসেবে পরিচিত। Ezine Articles (http://ezinearticles.com), Google Knol (http://knol.google.com), ArticleDashboard (www.articledashboard.com), Article Pros (www.articlepros.com), Article Directory (www.articledirectory.com) ইত্যাদি এমন কিছু সাইট। এখানে আপনি আপনার পছন্দের বিষয়ভিত্তিক লেখা জমা দিয়ে পারিশ্রমিক পেতে পারেন। এই পারিশ্রমিক হতে পারে সরাসরি কিংবা কোন affiliate program এর আওতাভূক্ত। যেমন, আপনি যদি ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়ে একটি আর্টিকেল লিখেন এবং ওয়েবসাইটে আপলোড করেন তাহলে হয়তো একই ওয়েব পেইজে Google AdSense এর মত কিছু সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন (contextual ad) ভেসে উঠবে। আপনার লেখা পড়তে পড়তে কোন পাঠক যখন ঐ বিজ্ঞাপনগুলো click করবে তখন sponsor ওয়েবসাইট এবং সেখানে বিজ্ঞাপনদাতা উভয়েই একটি নির্দিষ্ট অংকের অর্থ আয় করবে। এই বিজ্ঞাপনের আয়ের কিছু লভ্যাংশ আপনি পেয়ে যাবেন। তবে জেনে রাখা ভাল, এ ধরনের ফ্রীল্যান্স লেখার মাধ্যমে আয়ের পরিমাণ সাধারণতঃ কম হয়ে থাকে।
ফ্রীল্যান্স ‘নিলাম’ সাইট
ফ্রীল্যান্স লেখকদের জন্য আমার মতে সবচেয়ে লাভজনক হল online writing bid বা লেখালেখির নিলাম। তবে এই নিলামের শর্ত প্রচলিত নিলামের মত কঠিন নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ নয়। ব্যাপারটা একটু স্পষ্ট করে বলি।
ধরা যাক, আপনি একজন ফ্রীল্যান্স লেখক (রচনা/লেখা বিক্রেতা) এই নিলামের একটি ওয়েবসাইটে গিয়েছেন এবং registered user (সাধারণতঃ ফ্রী) হয়েছেন। এখানে আপনি পাবেন বিভিন্ন গ্রাহক বা ক্রেতার দেয়া লেখালেখি সম্পর্কিত অনেক প্রজেক্ট। যেকোন একটি প্রজেক্ট ক্লিক করলে আপনি সাধারণতঃ নিচের বর্ণনাগুলো পাবেনঃ
• প্রজেক্টের ধরণ (article, copywrite, review, rewrite ইত্যাদি)
• বিভিন্ন শর্তাবলী যেমনঃ
• রচনার শব্দসীমা (৪০০/৫০০ শব্দ)
• রচনার সময়সীমা (১ দিন/ ১১ ঘন্টা/ ৩ সপ্তাহ)
• বিড লিমিট অর্থাৎ গ্রাহকের বেঁধে দেয়া সর্বনিম্ন ও সর্বউচ্চ নিলামের ডাক (যেমনঃ $30-60, $90 maximum ইত্যাদি)।
• বিড লিমিটের বাইরে নির্ধারিত কোন rate (যেমনঃ $1 per 200 words, $0.005 per word ইত্যাদি)
• রচনার কাঠামো (প্যারাগ্রাফ, শিরোনাম, ফাইলের ধরন যেমন টেক্সট, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, জিপ ইত্যাদি)।
• নির্দিষ্ট কোন শব্দের নির্দিষ্ট সংখ্যক পুনরাবৃত্তি keyword density (যেমনঃ digital camera শব্দগুচ্ছটির ৫০০ শব্দে অন্ততঃ ৩ বার ব্যবহার, Nikon শব্দটির ৩০০ শব্দে অন্ততঃ ৫ বার ব্যবহার ইত্যাদি)।
• Plagiarism (সাধারণ অর্থে - অন্যের লিখা নকল করা) সম্পর্কিত সতর্কীকরণ। এর প্রতিকারের জন্য আপনার গ্রাহক সাধারণতঃ কিছু শক্তিশালী সফটওয়ার্ (যেমন copyscape) ব্যবহার করবেন।
• লেখার ধরন (যেমনঃ conversational, third person, first person, informal, funny, US/UK English ইত্যাদি)।
• নমুনা লেখা বা sample writing জমা দেবার নির্দেশ।
• অন্য কোন নির্দেশনা।
প্রজেক্টের শর্তাবলী যদি আপনার পছন্দ হয় তাহলে আপনি এখন বিড করবেন। ধরা যাক আপনি digital camera এর উপর একটি আর্টিকেল পছন্দ করেছেন। এই লেখাটি আপনি ১ দিনের মধ্যে লিখতে পারবেন। তাহলে বিড অপশনে গিয়ে আপনি ৫ ডলারে ১ দিনের মধ্যে আর্টিকেলটির জন্য বিড করুন। গ্রাহক যদি আপনার লেখার নমুনা এবং বিড পছন্দ করে তাহলে আপনি পেয়ে যাবেন কাজটি। একদিনের মধ্যে লিখে ফেলুন চমৎকার একটি লেখা আর তা জমা দিয়ে আয় করে নিন ৫ ডলার।
কিছু জানার বিষয়
• আপনার লেখার জন্য সম্মানী দুইভাবে পেতে পারেনঃ
 ওয়েবসাইটের পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে। গ্রাহক আপনার পাওনা ওয়েবসাইটে আপনার একাউন্টে জমা করবে, যা আপনি বিভিন্ন প্রচলিত money transfer অপশনের মাধ্যমে (যেমন PayPal, Moneybookers, Wire Transfer, Cheque) আপনার ব্যাংক একাউন্টে স্থানান্তর করতে পারবেন।
 ওয়েবসাইটের সিস্টেমের বাইরে যেয়ে সরাসরি PayPal, Moneybookers ইত্যাদির মাধ্যমে।
• ফ্রীল্যান্স নিলাম সাইটগুলোতে লেখা থেকে অর্জিত সম্মানীর একটি অংশ কমিশন হিসেবে ওয়েবসাইট গ্রহণ করে।
• সম্মানী সম্পর্কিত কোন মতবিরোধ হলে ওয়েবসাইটের conflict resolution বা arbitration এর মাধ্যমে আপনি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পেতে পারেন। তবে ওয়েবসাইটের সিস্টেমের বাইরে টাকাপয়সা আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে আপনি কোন সাহায্য পাবেন না বরং এক্ষেত্রে সম্মানী না পাবার সম্পূর্ণ ঝুঁকি আপনার।
• আপনি যদি এসমস্ত ওয়েবসাইটের সাধারণ সদস্য হন তাহলে অনেক ক্ষেত্রে আপনি মাসে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার বিড করতে পারবেন। আনলিমিটেড বিড এর জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট অংকের চাঁদা দিয়ে সদস্য হতে হবে।
• বিড জেতার জন্য আপনাকে একটি যৌক্তিক বিড করতে হবে। ৫০০ শব্দ সম্বলিত ২০০ টি লেখা আপনি যেমন একদিনে দিতে পারবেন না, তেমনি, ১০০০ শব্দের একটি আর্টিকেল লেখার জন্য ১০ দিন সময় নেয়াটাও অযৌক্তিক।
• আপনার জমাকৃত নমুনা লেখাটি আপনার বিড জেতার মূল শক্তি হিসেবে কাজ করবে। তাই নমুনা হিসেবে একটি ভাল লিখা পাঠান।
অনলাইন বিড এর জন্য সাইটসমূহ
• ওডেস্ক (www.odesk.com)
• গেট-এ-ফ্রীল্যান্সার (www.getafreelancer.com)
• গেট-এ-কোডার (www.getacoder.com)
• ই ল্যান্স (www.elance.com)
• স্ক্রিপ্টল্যান্স (www.scriptlance.com)
• রেন্ট-এ- কোডার (www.rentacoder.com)
আর বসে থাকা কেন? নেমে পড়ুন আপনার এক নতুন অর্থবহ (এবং অর্থকরীও বটে!) যাত্রায়। বছর ঘুরে আসার আগেই হয়ে যান একজন নিয়মিত অনলাইন লেখক আর আয় করতে থাকুন অতিরিক্ত কিছু টাকা।
Previous Post
Next Post

post written by: